স্পোর্টস ডেস্ক: বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ অন্যতম ফেবারিট পাকিস্তানের। তাদের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস। হায়দরাবাদের রাজি গান্ধি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ দুপুর আড়াইটায় শুরু হবে ম্যাচটি। বাংলাদেশে গাজী টিভি এবং টি-স্পোর্টসে সরাসরি দেখা যাবে খেলাটি।
গত একটি বছর কেটেছে অনিশ্চয়তায়। ভারতের মাটিতে পাকিস্তান বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে আসবে কী আসবে না, মাসাধিককাল ধরে চলছিলো প্রশাসনিক দৌরাত্ম্য। সর্বশেষ, পাকিস্তানিরা ভারত গিয়ে খেলার প্রস্তুতি নিলেও তৈরি হয় ভিসা জটিলতা। রওয়ানা হওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে গিয়ে ভিসাপ্রাপ্তি ঘটে তাদের।
এরপর দুবাই হয়ে হায়দরাবাদ। পাকিস্তানি ক্রিকেট দল পা রাখে ভারতের মাটিতে। সাত বছর পর পাকিস্তানের কোনো ক্রিকেট দল এলো ভারতে খেলতে। কিন্তু এতদিন যা ঘটে গেছে, ভারতের মাটিতে পা দেয়ার পর সব যেন ভুলে যেতে হলো বাবর আজমদের। উষ্ণ আতিথেয়তা দিয়ে পাকিস্তানিদের বরণ করে নিলো হায়দরাবাদের মানুষ। বাবর আজম মুখ ফুটে বলেই দিয়েছিলেন, ‘এমন আতিথেয়তায় আমরা মুগ্ধ।’
অবশেষে সব অনিশ্চয়তার অন্ধকার কাটিয়ে ভারতের মাটিতে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে আজ। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আজ শুরু হবে বাবর আজমদের বিশ্বকাপ লড়াই। ধারণা করা হচ্ছিলো, রাজিব গান্ধি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে আজ তিল ধারণের ঠাঁই হবে না। কিন্তু ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপের খেরা দেখতে আসার জন্য এখনও ভিসা পাননি পাকিস্তানি ক্রিকেট সমর্থকরা। যার ফলে হয়তো বা, উদ্বোধনী ম্যাচরে মতোই গ্যালারি অনেকটা ফাঁকা থাকতে পারে হায়দরাবাদেও।
কাগজে-কলমে দুই দলের শক্তির পার্থক্য আকাশ-পাতাল! একদল র্যাংকিংয়ে এখন দুই নম্বরে। অন্যদল নম্বরে। কিছুদিন আগেও পাকিস্তান ছিল শীর্ষে। অর্থ্যাৎ, বলা যায় শীর্ষে থাকা দলের সঙ্গে একবারে তলানীর দলের লড়াই। ক্রিকেটের ইতিহাস-ঐতিহ্যেও দুই দলের পার্থক্য অনেক বেশি।
তবে পাকিস্তানের চেয়ে নেদারল্যান্ডসের উজ্জীবিত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। বাাছাই পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ডের মতো দলকে পেছনে ফেলে এবারের বিশ্বকাপ খেলতে আসার যোগ্যতা অর্জন করেছে ডাচরা। সে হিসেবে বিশ্বকাপে তাদের হারানোর কিছুই নেই, যা পারে তার সবই হবে অর্জন।
সেই উজ্জীবিত ডাচদের বিপক্ষে আজ ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করছে ১৯৯২ সালের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। যারা ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে গেছে অন্যতম ফেবারিট হিসেবে।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে খেলতে আসার কারণে স্বাভাবিকভাবেই কিছু চাপ অনুভব করার কথা; কিন্তু হায়দরাবাদে ভারতীয়দের উষ্ণ আতিথেয়তায় মুগ্ধ পাকিস্তান ক্রিকেটাররা। ফলে এখানে এসে কোনো চাপই অনুভব করছেন না বলে জানালেন তারা।
যাদিও বিশ্বকাপে ভালো শুরু করাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকেট যেহেতু গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা, যে কোনো দিন যে কোনো দল যে কোনো কিছু করে বসতে পারে। পাকিস্তানের বেলায় এ বিষয়টা অনেক বেশি সত্যি। কারণ, এই একটি দলের নামই যে ‘আনপ্রেডিক্টেবল!’
এ কারণে কিছুটা চাপ তো অনুভব করছেই টিম পাকিস্তান। দলের ডিরেক্টর মিকি আর্থারও বিষয়টা স্বীকার করলেন, ‘বিশ্বকাপের চাপ সব সময় অনেক বেশি থাকে। তবে আমার ছেলেরা ভারতের সময়টা উপভোগই করছে।’ ২০১৯ সালে পাকিস্তানের কোচ ছিলেন আর্থার। এবার দায়িত্ব পালন করছেন টিম ডিরেক্টর হিসেবে।
২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের আগে বিদায়ঘণ্টা বেজেছিল ৯২’র চ্যাম্পিয়নদের। ওই অপূর্ণতা এবার ঘোচাতে চান আর্থার, ‘চার বছর আগের সেই তরুণরা এখন আরো পরিণত, আরো অভিজ্ঞ। এই সময়ে ওয়ানডেতে জয়-পরাজয়ের সেরা অনুপাতও আমাদের। বিশ্বকাপের জন্য খেলোয়াড়রা ভালোভাবে তৈরি।’
পাকিস্তানিরা অনেক বেশি সতর্কও। কারণ, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠতে পারেনি তারা। একঝাঁক প্রতিভাবান খেলোয়াড় নিয়েও বিদায় নিতে হয়েছিলো সুপার ফোর থেকে।
টিম ডিরেক্টর মিকি আর্থার জানাচ্ছেন, পাকিস্তান এখন অতিরিক্ত বাবর-রিজওয়ান নির্ভর নয়। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই না। হ্যাঁ, বাবর ও রিজওয়ান অসাধারণ ক্রিকেটার। কিন্তু আমাদের ইমাম-উল হকের মতো ব্যাটারও আছে।’
পেস আক্রমণ সব সময় শক্তির জায়গা পাকিস্তানের। কিন্তু চোটে নাসিম শাহ ছিটকে পড়ায় ভারতে আসার আগেই কিছুটা শক্তি খর্ব হয়েছে। স্পিনারদের ফর্ম নিয়েও আছে দুর্ভাবনা। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ছন্দে ফিরে সেই দুর্ভাবনা দূরে সরিয়ে দেওয়ার একটা সুযোগ পাচ্ছেন তারা।
আর্থারও মনে করেন একটা ভালো নৈপুণ্যই পুরোপুরি বদলে দেবে ছবিটা, ‘মানসিকভাবে খুব ভালো অবস্থানে আছে সবাই। আশা করছি, আগামীকাল (আজ) ওরা ভালোও করবে এবং এরপর আত্মবিশ্বাস শুধু বাড়তেই থাকবে। একটা ভালো নৈপুণ্যই পারে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে। আশা করছি, সেটা আগামীকালই (আজ) হবে।’
নিজেদের সর্বোচ্চটা নিংড়ে দিতে প্রস্তুত নেদারল্যান্ডসও। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিদায় করে দিয়ে যারা বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে, তাদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকারই কথা। ডাচ কোচ রায়ান কুক বলেন, ‘বড় কিছু করার বাসনা নিয়ে আমরা বিশ্বকাপ খেলতে এসেছি। সেমিফাইনালে উঠতে হলে পাঁচ-ছয়টা জয় লাগে। আর এ জয়গুলো পেতে আমরা সর্বোচ্চটাই নিংড়ে দেব।’
দলের অন্যতম তারকা বাস ডি লিডি ম্যাচের আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলা তাদরে লক্ষ্য। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না এখানে কোন দল কোন কিছু হারাতে এসেছে। সবাই কোন না কোন কিছু পাওয়ার জন্যেই বিশ্বকাপে এসেছে। অবশ্যই ২০১১ সালের পর বিশ্বকাপে খেলতে পারাটা আমাদের জন্য বিশেষ কিছু। আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা সেমিফাইনাল ঠিক করেছি; আমার মনে হয় না আমরা সেটি পারবো না। যদি আমরা সেটা না পারি তবুও আমরা বিশ্বকাপে খেলার জন্য নিজেদেরকে নিয়ে গর্ববোধ করবো। সবাই আমাদের নিয়ে যা ভাবছে আমরা হয়তো তার থেকেও বেশি কিছু করতে পারবো।’